February 1, 2025, 5:10 am
কার্যকর হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সরকারি নির্দেশনা
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সর্বনিম্ন তাপমাত্রার হাঁড় কাপানো ঠান্ডায় কাপছে বরিশাল সহ সন্নিহিত অঞ্চল। বরিশালে মঙ্গলবার সকালে তাপমাত্রার পারদ সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন ৮.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। যা এসময়ের স্বাভাবিক ১১.৯ ডিগ্রীর চেয়ে ৩.৫ ডিগ্রী কম। এসময়ে দ্বীপজেলা ভোলাতেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের প্রায় ৩ডিগ্রী নিচে, ৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের ২ডিগ্রী নিচে ২৩.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে স্থির হয়। তবে আবহাওয়ার এ বিরুপ পরিস্থিতিতেও এসব জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়নি। আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালসহ কয়েকটি এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ২.৫ থেকে ৩ ডিগ্রী নিচে নেমে যাবার সাথে উত্তর-পশ্চিমের হিমেল হাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বরিশাল মহানগরী সহ সন্নিহিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ ছিল সব বর্ণনার বাইরে। এমনকি সকাল ৯টা পর্যন্ত মেঘনা অববাহিকা এবং বরিশাল মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল। আবহাওয়া বিভাগ বুধবার থেকে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধির কথা বললেও মাঘের এ শীতের দাপটে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিলনা। পৌষের শেষভাগ থেকেই বরিশাল অঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করলেও মাঘের প্রথম দিন গত ১৫ জানুয়ারী বরিশালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ২.৯ ডিগ্রী নিচে ৯ ডিগ্রীতে নেমে যায়। পরের দিন তা ৯.৫ ডিগ্রীতে বৃদ্ধি পায়। সপ্তাহজুড়ে তাপমাত্রা সাড়ে ১১ থেকে ১৩.৬ ডিগ্রীর মধ্যে ঘোরা ফেরা করলেও রোববারে তা ১২.৫ ডিগ্রী থেকে সোমবারে ১১.৪ ডিগ্রীতে হ্রাস পায়। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে মঙ্গলবার সকালে বরিশালে তাপমাত্রা সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন ৮.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পেল। মাঘের কনকনে শীতের এ দাপটের মধ্যেও খোদ বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ মঙ্গলবার খোলা ছিল। অথচ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীর নিচে নামলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত রয়েছে। ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত শিশুদের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সকাল ১০টা থেকে শুরু করার নির্দেশনা থাকলেও মঙ্গলবারও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আগের মত সকাল সাড়ে ৮টায় ক্লাশ শুরু করতে দেখা গেছে। এব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ পরিচালক বলেন ‘জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের আবহাওয়া অফিস থেকে তাপমাত্রা সহ সার্বিক পরিস্থিতি খোঁজ খবর নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে’। মঙ্গলবার বরিশাল ও ভোলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীর নিচে নেমে যাবার পরেও প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ খোলা রাখার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এদিকে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে শীতের দাপটে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই এ অঞ্চলে দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগাক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে গত একমাসে প্রায় দেড় হাজার নিউমোনিয়া রোগী এসেছেন সরকারি হাসপাতালগুলোতে। গত বছর বরিশাল বিভাগে প্রায় ৭২ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরে নতুন বছরের প্রথম ২৩ দিনে আরো ৩ হাজার আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে এসেছেন। অব্যাহত শৈত্য প্রবাহে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের বোরো বীজতলা, গম, গোল আলু সহ শীতকালীন সবজির ক্ষতি কৃষকের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাজ আরো গভীর করছে। চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ হেক্টরে ১৭ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে যে বীজতলা তৈরী হয়েছে, তা ‘কোল্ড ইনজুরীর কবলে। অপরদিকে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির বাগানেও থাবা বসিয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া পরিস্থিতি। চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে। অপরদিকে, প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যে চলতি রবি মৌসুমে যে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টরে গম আবাদ হয়েছে ঘন কুয়াশা, বৃষ্টি সহ বৈরী আবহাওয়া সেখানেও ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগের শংকা তৈরী করছে।
Leave a Reply